জেনিনে আত্মসমর্পণের পরই দুই ফিলিস্তিনিকে হত্যা — ইসরায়েলের বিরুদ্ধে অভিযোগ |
ইসরায়েলি বাহিনী উত্তর পশ্চিম তীরের (West Bank) Jenin শহরে একটি রেসকিউ অপারেশনের সময় দুই ফিলিস্তিনি যুবক — ২৬ বছরের আল-মুনতাসির আবদুল্লাহ এবং ৩৭ বছরের ইউসুফ আসাসা — আত্মসমর্পণ করেও গুলিবিদ্ধ হন। ভিডিও ফুটেজ ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম-সাধারণের প্রতিক্রিয়া অনুযায়ী, এই ঘটনা “শীত রক্তে হত্যা” বা extrajudicia

জেনিনে আত্মসমর্পণের পরই দুই ফিলিস্তিনিকে হত্যা — ইসরায়েলের বিরুদ্ধে অভিযোগ | - Ajker Bishshow
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে Hamas–Israel Defense Forces (IDF) সংঘর্ষ, গাজা যুদ্ধ ও পশ্চিম তীরে নিরাপত্তা অভিযানের মধ্য দিয়ে মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা বহুগুণ বেড়েছে। সেই যুদ্ধ ও উত্তেজনার প্রেক্ষিতে, ইসরায়েল জানিয়েছে যে তারা পশ্চিম তীরে — বিশেষ করে উত্তর পশ্চিম তীর (West Bank) — মদতাকারী জঙ্গি গঠন ভেঙে দিতে, সন্ত্রাসবাদ নিয়ন্ত্রণে রাখতে অভিযান চালাচ্ছে।
তবে একই সঙ্গে, মানবাধিকার গোষ্ঠী ও আন্তর্জাতিক গুরুত্বপূর্ণ পর্যবেক্ষকরা বলছেন, “কর্মকাণ্ড” ও “নিয়মিত বিরামহীন অভিযানের” আড়ালে ন্যায়ের মানদণ্ড, আন্তর্জাতিক আইন এবং নাগরিকদের নিরাপত্তা গ্যারান্টি অনেকাংশেই উপেক্ষা করা হচ্ছে।
ঘটনা — কী হয়েছে
২০২৫ সালের ২৭ নভেম্বর, উত্তর পশ্চিম তীরের জেনিন শহরে ইসরায়েলি সশস্ত্র বাহিনী (IDF ও সীমান্ত পুলিশ) এক রেইড পরিচালনা করে। অভিযানের সময় দুই ফিলিস্তিনি যুবক — ২৬ বছরের আল-মুনতাসির আবদুল্লাহ এবং ৩৭ বছরের ইউসুফ আসাসা — “wanted suspects” হিসেবে তালিকাভুক্ত ছিল। বাহিনী দাবি করেছে, তারা “সন্ত্রাসী নেটওয়ার্ক”-র সঙ্গে যুক্ত এবং তারা আগেই বোমা নিক্ষেপ বা গুলির ঘটনা ঘটিয়েছে। অভিযানের পর, তারা আত্মসমর্পণ করে।
ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়: ওই দুই যুবক একটি গ্যারেজ থেকে বেরিয়ে আসে, হাতে শার্ট তুলে দেখায় যে তারা আগ্নেয়াস্ত্র বা বোমা হামলার জন্য সজ্জিত নয়। তারা অস্ত্রবিহীন — এমনই ইঙ্গিত দেয়। তাদের “زمینেতে বসতে” বলা হয়; তারা মাটিতে বসে, চারপাশে জঙ্গি গোষ্ঠীর সদস্যরা ছিল। পরবর্তীতে, একই বাহিনী তাদের গ্যারেজের ভিতরে পাঠানোর নির্দেশ দেয়। সেই সময় – যেসব নির্দেশ বজায় ছিল, সেই সময় গুলির শব্দ শোনা যায়। এক বা একাধিক সৈনিক গুলি চালায়। যুবকরা মাটিতে পড়ে যায়; কিছুক্ষণের মধ্যে দুটি দেহ পাওয়া যায়।
ভিডিওতে যেভাবে তাদের আত্মসমর্পণ, অবাধুস্তভাবে অস্ত্রবিহীন অবস্থায় থাকা এবং তারপর গুলিবিদ্ধ হওয়ার দৃশ্য ধরা পড়েছে — অনেকেই বলছেন, এটি এক “শীত রক্তে হত্যা” বা extrajudicial killing।
প্রতিক্রিয়া
- Palestinian Authority (PA) — ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ — একরাশ অভিযোগ করেছে যে, এটি ছিল “সম্পূর্ণ পরিকল্পিত, আইনবহির্ভূত হত্যা”। তাদের মতে, যারা আত্মসমর্পণ করেছে, তাদেরকে মাটিতে পড়লেও গুলি করা হয়েছে। এটি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন ও যুদ্ধবিধি উভয়েরই স্পষ্ট লঙ্ঘন।
- একাধিক মানবাধিকার সংগঠন ও বিশ্লেষক বলছেন, যদিও ইসরায়েলি বাহিনী একটি “তদন্ত” শুরু করেছে, কিন্তু অতীতে এমন তদন্ত থেকে খুব কমবারই দৃষ্টান্তবিচার বা প্রকৃত দায়িত্বহীনতার পরিপ্রেক্ষিতে সুষ্ঠু বিচার দেখেছে।
- অন্য দিকে, ইসরায়েলি নিরাপত্তা মন্ত্রী Itamar Ben‑Gvir, যিনি জাতীয় নিরাপত্তা বিষয় দেখেন, বলেছেন যে — “জঙ্গিরা মরে যেতেই হবে” এবং বাহিনী “ঠিকমতো কাজ করেছে”। তার এই মন্তব্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ে তীব্র নিন্দার কারণ হয়েছে।
প্রসারিত প্রেক্ষাপট ও উদ্বেগ
এই হত্যাকাণ্ড জেনিনে সংঘটিত হয়েছে — কিন্তু এটি একাকী ঘটনা নয়। পশ্চিম তীর (West Bank) জুড়ে গত কয়েক মাসে এবং সম্ভবত গত কয়েক বছরে ইসরায়েলি নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযানে সন্ত্রাসের অভিযোগ, গ্রেফতারি ও অপহরণ, গুলিবর্ষণ, বাড়ি তল্লাশি, নির্বিচার হত্যাকাণ্ডসহ বিভিন্ন ঘটনা যুক্ত হয়েছে।
বিশ্লেষকরা এবং মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছেন, ইসরায়েলের এই “counterterrorism operations” — যদিও সন্ত্রাসবাদ নির্মূলে আখ্যায়িত — বাস্তবে অনেক সময় “নাগরিকদের ওপর নির্যাতন, নিরাপত্তা আইন-উल्लঙ্ঘন ও মানবাধিকার লঙ্ঘন” এর আড়ালে পরিচালিত হচ্ছে।
এই নিহত দুই যুবকের ঘটনা যখন গোটা বিশ্বের নজরে এসেছে, তখন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়, মানবাধিকার সংস্থা এবং কিছু রাষ্ট্র-level নেতা-সহ আন্তর্জাতিক মিডিয়া তীব্র প্রতিক্রিয়া দিয়েছে। তারা বলেছে, এমন extrajudicial killings — বিশেষ করে যখন ভিডিও প্রমাণ আছে — আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী অপরাধ, এবং দায়ীদের বিচার-ন্যালায় নিশ্চিত করতে হবে।
বিশ্লেষণ: কেন এটি গুরুত্ব রাখে
- নিয়মিত impunity (অপরাধের দায়-মুক্তি): অতীতে এমন ঘটনায় ইসরায়েলি তদন্ত শুরু হলেও, খুব কমবারই সঠিকভাবে বিচার হয়েছে। ফলে অপরাধীদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্ত গঠন হয়নি। এখনকার ঘটনা প্রমাণসহ ঘটেছে — তাই বিচার-নিরপেক্ষতা বেশি দাবি উত্থাপন করছে।
- আন্তর্জাতিক আইন ও মানবাধিকার: যদি নিরস্ত্র এবং আত্মসমর্পণকারী ব্যক্তিদের গুলি করে হত্যা করা হয়, তাহলে সেটি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন এবং যুদ্ধবিধি (international humanitarian law)–র স্পষ্ট লঙ্ঘন। এটি পশ্চিমা-অর্থপ্রদাতা দেশগুলোর নীতি, সহায়তা ও নিরাপত্তা আর্থিক সহায়ে প্রশ্ন তোলে।
- সম্প্রদায়িক উত্তেজনা ও প্রতিক্রিয়া: ফিলিস্তিনি জনগোষ্ঠা মধ্যে ক্ষোভ ও প্রতিশোধের আহ্বান বাড়তে পারে, যা সামগ্রিক শান্তি প্রচেষ্টাকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।
- আন্তর্জাতিক চাপ ও ন্যায়-আদায়ের গুরুত্ব: প্রমাণ থাকা অবস্থায় ন্যায় প্রতিষ্ঠা এবং দায়ী ব্যক্তিদের বিচার না হলে, একই ধরনের extrajudicial killings নতুন উদ্দীপনা পাবে — যা অঞ্চলের জন্য খুবই বিপদজনক।
২০২৫ সালের ২৭ নভেম্বর, জেনিনে আত্মসমর্পণকারী দুই ফিলিস্তিনি যুবককে গুলিবিদ্ধ করে হত্যার ঘটনা — ভিডিওতে দৃশ্যায়িত হওয়ার কারণে — এখন আন্তর্জাতিক সাম্প্রদায়িক নজর আকর্ষণ করেছে। ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ এবং মানবাধিকার গোষ্ঠী এটি “শীত রক্তে হত্যা” দাবি করেছে। ইসরায়েলি বাহিনী তদন্ত আশ্বাস দিলেও, অতীতে এরকম তদন্তগুলি খুব কম ফলাফল দিয়েছিল।
এই মর্মরচিত হত্যাকাণ্ড কেবল নিছক একটি ঘটনা নয় — এটি সেই বৃহত্তর বস্তুগত সমস্যার প্রতিফলন, যেখানে সন্ত্রাস নিবারণের নামে নিরাপত্তা বাহিনী প্রায়ই কার্যকারিতার উত্তরাধিকাংশে প্রয়োজনীয় আইনগত এবং মানবিক চেক–ব্যাল্যান্স উপেক্ষা করছে।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়, মানবাধিকার সংস্থা এবং মিডিয়া এখন নজর রাখছে — এবং আশা করা যায়, এই ঘটনার বিচার এবং দায়ীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি জানতে আগ্রহ দেখাবে। নালিশগুলো যদি ধরা না পড়ার মতো হয়, তাহলে শুধু বিচারিক অপরাধ নয়; এটি একটি ন্যায়বিরোধী, বৈষম্যমূলক প্রক্রিয়া হিসেবে স্থায়ী ভয়ের কারণ হয়ে দাঁড়াবে।
Related Posts
View All
ইয়েমেনে বিচ্ছিন্নতাবাদী দখলের পর সৌদি-আমিরাতের যৌথ কূটনৈতিক অভিযান | নতুন সংঘাতের ইঙ্গিত?
দক্ষিণ ইয়েমেনে বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীর ক্ষমতা দখলের পর সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের যৌথ প্রতিনিধি দলের উপস্থিতি নতুন কূটনৈতিক বাস্তবতার ইঙ্গিত দিচ্ছে। এই সংকট শুধু ইয়েমেনের অভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতাকেই প্রশ্নবিদ্ধ করছে না, বরং রিয়াদ-আবুধাবির ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের ভেতরের টানাপোড়েনও স্পষ্ট করে তুলছে।

🔥 সিরিয়ায় ইসরায়েলের ১,০০০+ হামলা! জোলানির বিস্ফোরক দাবি বিশ্বজুড়ে আলোড়ন | Israel Launches 1,000+ Airstrikes on Syria — Jolani Drops a Bombshell
সিরিয়ার অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্ট আবু মোহাম্মদ আল-জোলানি দাবি করেছেন যে ইসরায়েল দেশটির বিরুদ্ধে ১,০০০-এরও বেশি বিমান হামলা এবং শতাধিক স্থল অভিযান চালিয়েছে। এই অভিযোগে মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা আরও বৃদ্ধি পেয়েছে।

গাজায় গণবিয়ে: যুদ্ধের ধ্বংসস্তূপ পেরিয়ে নতুন জীবনের উৎসব | Mass Wedding in Gaza: A Celebration of New Life After Years of War and Tragedy
গাজায় বছরের পর বছর যুদ্ধ, হামলা ও মানবিক বিপর্যয়ের পর অবশেষে এক অনন্য গণবিয়ে অনুষ্ঠান আনন্দের নতুন আলো নিয়ে আসে। ধ্বংসস্তূপের শহরে মানুষের মুখে ফুটে ওঠে বহু প্রতীক্ষিত হাসি—নতুন জীবনের প্রতিশ্রুতি।








