বেগম রোকেয়ার ৩৫০ বিঘা জমি কোথায় হারাল? ৯৩ বছর পরও কেন উদ্ধার হলো না? | Where Did Begum Rokeya’s 350 Bighas of Land Go? Why It Still Remains Unrecovered After 93 Years!
বেগম রোকেয়ার পৈতৃক ৩৫০ বিঘা জমির বেশিরভাগই দীর্ঘদিন ধরে দখলে রয়েছে। জন্মের ১৪৫ বছর ও মৃত্যুর ৯৩ বছর পরেও জমিগুলো আজও উদ্ধার হয়নি। স্থানীয় প্রভাবশালী গোষ্ঠী, প্রশাসনিক অবহেলা ও মামলার ধীরগতির কারণে ঐতিহাসিক এই সম্পত্তি এখনো দখলমুক্ত হয়নি।

বেগম রোকেয়ার ৩৫০ বিঘা জমি কোথায় হারাল? ৯৩ বছর পরও কেন উদ্ধার হলো না? | Where Did Begum Rokeya’s 350 Bighas of Land Go? Why It Still Remains Unrecovered After 93 Years! - Ajker Bishshow
বাংলার নারী জাগরণের পথিকৃৎ বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন—যাঁর কলম ও চিন্তা নারী শিক্ষার ইতিহাস বদলে দিয়েছে।
তিনি জন্মগ্রহণ করেন রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার পায়রাবন্দ গ্রামে ১৮৮০ সালের ৯ ডিসেম্বর।
মৃত্যুবরণ করেন ১৯৩২ সালের ৯ ডিসেম্বর, তাঁর জন্মদিনেই।
রোকেয়ার পরিবার পায়রাবন্দ গ্রামে প্রায় ৩৫০ বিঘা জমির মালিক ছিলেন।
কিন্তু আজ সেই বিশাল জমির প্রায় কিছুই আর নেই।
শুধুমাত্র ৭২ শতকের মতো একটি ছোট অংশ সরকারি রেকর্ডে টিকে আছে।
এখন প্রশ্ন—
এত বড়ো জমি গেল কোথায়?
এবং রোকেয়ার মৃত্যুর ৯৩ বছর পরেও কেন সেই দখল হওয়া জমি উদ্ধার হলো না?
এই প্রতিবেদনে সহজ ভাষায় তুলে ধরা হলো জমির বর্তমান অবস্থা, দখলের ইতিহাস, প্রশাসনের ব্যর্থতা এবং করণীয়।
৩৫০ বিঘা জমির বর্তমান অবস্থা
✔ হাতে আছে মাত্র ৭২ শতক
৩৫০ বিঘার জায়গায় এখন সরকারি নথিতে রোকেয়া পরিবারের নামে মাত্র ৭২ শতক জমি রয়েছে।
বাকিটা নানা সময় স্থানীয় প্রভাবশালীরা দখল করে নিয়েছেন।
✔ দখলদারদের তালিকাও নেই
স্থানীয় প্রশাসনের কাছে জমি দখলকারীদের কোনো পূর্ণাঙ্গ তালিকা নেই।
কে কতটা দখল করেছে—এর স্পষ্ট রেকর্ড নেই।
ফলে জরিপ কাজও বারবার আটকে যায়।
✔ দখলদাররা জমিতে বসতঘর, দোকান, চাষাবাদ—সব করে
জমির উপর বাড়ি, দোকান, বাগান, ফসল—সবই রয়েছে।
অনেকে নিজেদের “পুরোনো ভোগদখল” দেখিয়ে জমি ছাড়তেও চাইছে না।
স্মৃতি কেন্দ্রের বর্তমান অবস্থা
১৯৯৭ সালে সরকার রোকেয়ার স্মৃতি সংরক্ষণের জন্য মাত্র ৩.১৫ একর জমি অধিগ্রহণ করে।
৩৫০ বিঘার তুলনায় এটি খুবই সামান্য।
আজ স্মৃতি কেন্দ্রের অবস্থা—
- ভবনগুলো ভাঙাচোরা
- পর্যাপ্ত সংগ্রহশালা নেই
- দর্শনার্থীদের জন্য পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেই
- রোকেয়ার জীবনের স্মৃতি সংরক্ষণে বড় ঘাটতি
বাংলার নারী জাগরণের সবচেয়ে বড় প্রতীককে ঘিরে এমন নড়বড়ে অবস্থা কোনোভাবেই মানানসই নয়।
জমি কীভাবে হারিয়ে গেল?
১. স্থানীয় শক্তিশালী গোষ্ঠীর দখল
বিভিন্ন প্রভাবশালী পরিবার ধীরে ধীরে জমিগুলো দখল করে নেয়।
তাদের কাছে জমির বৈধ কাগজ নেই—তবু তারা দীর্ঘদিন ধরে এই জমি ব্যবহার করে আসছে বলে দাবি করছে।
২. প্রশাসনের অবহেলা
অনেক বছর ধরেই ভূমি জরিপ হয়নি।
দখলদারদের বিরুদ্ধে কার্যকর অভিযানও হয়নি।
অধিকাংশ সিদ্ধান্ত কাগজে–কলমেই থেকে গেছে।
৩. দীর্ঘ মামলার জটিলতা
২০১২ সালে জমি উদ্ধারের জন্য হাইকোর্টে রিট করা হয়।
কিন্তু ১৩ বছর পরেও মামলার কোনো দৃশ্যমান অগ্রগতি নেই।
এই সময়ের মধ্যে দখলদাররা আরও শক্ত অবস্থান তৈরি করেছে।
রোকেয়ার মৃত্যুর ৯৩ বছর পরেও জমি উদ্ধার হলো না কেন?
এটি সবচেয়ে বড় প্রশ্ন।
কেন প্রায় এক শতাব্দী পার হলেও তাঁর পৈতৃক ভিটা উদ্ধার হলো না?
✔ কারণ ১: শক্তিশালী দখলচক্র
দীর্ঘদিনের দখলচক্রকে অপসারণ করতে স্থানীয় প্রশাসন পিছপা।
✔ কারণ ২: রাজনৈতিক প্রভাব
কিছু দখলদারের পেছনে রাজনৈতিক সহায়তা রয়েছে বলে অভিযোগ আছে।
✔ কারণ ৩: রোকেয়া নিয়ে জাতীয় পর্যায়ে পর্যাপ্ত চাপ নেই
রোকেয়ার অবদান বিশাল হলেও তাঁর জমি উদ্ধারের জন্য জাতীয় আন্দোলন বা বড় দাবি খুব কম শোনা যায়।
✔ কারণ ৪: মামলার ধীরগতি
দীর্ঘসূত্রিতা দখলদারদের আরও সুযোগ তৈরি করেছে।
ফলে আজ রোকেয়ার স্মৃতি ধরে রাখার জন্য যে জমি রক্ষা করার কথা ছিল—তা প্রায় হারিয়েই গেছে।
জমি হারিয়ে যাওয়ার বড় ক্ষতি
✔ রোকেয়ার স্মৃতি প্রায় বিলীন
বেগম রোকেয়ার আঙিনা, বাড়ির চারপাশ, পূর্বপুরুষের জমি—সবই প্রায় দখলের নিচে।
নতুন প্রজন্ম তাঁর জন্মভিটা সম্পর্কে বাস্তব রূপ দেখতে পারছে না।
✔ সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক ক্ষতি
যদি জমি সংরক্ষিত থাকত, আজ পায়রাবন্দ একটি বড় পর্যটন কেন্দ্র হতে পারত।
✔ নারী জাগরণের প্রতীকের প্রতি অবহেলা
যিনি নারীদের ঘর থেকে বের করে শিক্ষার আলো দেখিয়েছেন—তাঁর নিজের ঘরের ইতিহাসই হারিয়ে যাচ্ছে।
এখন কী করা প্রয়োজন?
১. জমির পূর্ণাঙ্গ তালিকা তৈরি
প্রশাসন, ভূমি অফিস, প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর যৌথভাবে পায়রাবন্দে জরিপ করে দখলদারদের সঠিক তালিকা তৈরি করতে হবে।
২. দখলমুক্ত করতে অভিযান
বৈধ কাগজ ছাড়া যারা জমি দখল করেছে—তাদের উচ্ছেদ করতে হবে।
৩. মামলার দ্রুত নিষ্পত্তি
২০১২ সালের মামলার দ্রুত রায় প্রয়োজন।
দীর্ঘসূত্রিতা বন্ধ না হলে জমি ফেরানোর পথ আরও কঠিন হবে।
৪. স্মৃতি কেন্দ্র আধুনিকীকরণ
- আধুনিক জাদুঘর
- গবেষণা কেন্দ্র
- পর্যটন সুবিধা
- রোকেয়ার ব্যবহৃত সামগ্রীর পুনঃসংগ্রহ
পায়রাবন্দকে একটি ঐতিহাসিক, সাংস্কৃতিক কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে হবে।
বেগম রোকেয়া শুধু সাহিত্যিক নন—তিনি বাংলার নারী জাগরণের ইতিহাসের সবচেয়ে উজ্জ্বল নাম।
তাঁর জন্মভিটা, পারিবারিক জমি, আঙিনা—এসব শুধু জমি নয়, এটি আমাদের ইতিহাসের অংশ।
কিন্তু দুঃখের বিষয়—
রোকেয়ার মৃত্যুর ৯৩ বছর পরেও
তাঁর পৈতৃক ৩৫০ বিঘা জমির বেশিরভাগই দখলমুক্ত করা যায়নি।
এটি শুধু প্রশাসনিক ব্যর্থতা নয়—এটি আমাদের সমাজ হিসেবে লজ্জার বিষয়।
আমরা যদি এখনই ব্যবস্থা না নিই—তাহলে নারী জাগরণের এই মহান ব্যক্তিত্বকে ঘিরে যা কিছু অবশিষ্ট আছে, সেগুলোও হয়তো ইতিহাস থেকে হারিয়ে যাবে।
Related Posts
View All
অস্ট্রেলিয়ার বিশ্বকাঁপানো সিদ্ধান্ত! 🚫🇦🇺 ১৬ বছরের নিচে সোশ্যাল মিডিয়া সম্পূর্ণ বন্ধ | Australia’s Bold Move: World-First Social Media Ban for Under-16s Sparks Global Shockwave 🚫📱
অস্ট্রেলিয়া বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে ১৬ বছরের নিচের কিশোরদের জন্য সকল সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম নিষিদ্ধ করেছে। নতুন এই আইন কার্যকর হওয়ার পর থেকেই Facebook, Instagram, TikTok, Snapchatসহ বড় বড় প্ল্যাটফর্মগুলোতে শুরু হয়েছে অ্যাকাউন্ট বন্ধের প্রক্রিয়া। সিদ্ধান্তকে ঘিরে দেশে-বিদেশে চলছে তুমুল বিত

৬০-এ প্রেমের নতুন অধ্যায়! ❤️ Aamir Khan বললেন, Gauri Spratt তার জীবনে এনেছেন শান্তি ও খুশি | Aamir Khan Finds Love at 60! ❤️ How Gauri Spratt Brings Calm and Happiness to His Life
৬০ বছর বয়সেও জীবন তাকে দেবে নতুন ভালোবাসার সুযোগ—এমনটি স্বপ্নেও ভাবেননি বলিউড সুপারস্টার Aamir Khan। তবে Gauri Spratt‑এর সঙ্গে তার সম্পর্ক জীবনে এনেছে শান্তি, স্থিরতা এবং নতুন উৎসাহ। তার মন্তব্য, “Gauri brings a lot of calm, a lot of steadiness,” এখন ভক্তদের মধ্যে আলোচনার বিষয়।






