🔥 যুক্তরাষ্ট্র–রাশিয়া গোপন বৈঠক থেকে কী বের হলো? যুদ্ধ বন্ধের স্বপ্ন কি শেষ? | US–Russia Talks Fail to Deliver: What It Means for the Future of the Ukraine War
মস্কোতে যুক্তরাষ্ট্র–রাশিয়া শান্তি–আলোচনা “গঠনমূলক” বলা হলেও কোনো চূড়ান্ত চুক্তি হয়নি। রাশিয়া তাদের ভূখণ্ড দাবি থেকে সরে আসেনি, আর যুক্তরাষ্ট্র বলছে—আলোচনা চলবে, কিন্তু যুদ্ধ থামার কোনো লক্ষণ এখনো নেই।

🔥 যুক্তরাষ্ট্র–রাশিয়া গোপন বৈঠক থেকে কী বের হলো? যুদ্ধ বন্ধের স্বপ্ন কি শেষ? | US–Russia Talks Fail to Deliver: What It Means for the Future of the Ukraine War - Ajker Bishshow
২০২৫ সালের ডিসেম্বরের শুরুতে মস্কোতে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে অনুষ্ঠিত বহু আলোচিত “শান্তি–আলোচনা” আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। ইউক্রেনে চলমান বিধ্বংসী যুদ্ধ শেষ করার প্রচেষ্টা হিসেবে এই আলোচনাকে ট্রাম্প প্রশাসনের সবচেয়ে বড় কূটনৈতিক পদক্ষেপ বলা হচ্ছিল। কিন্তু আলোচনা শেষে যে ফল সামনে এসেছে, তা শুধু হতাশাজনক নয়—বরং ইউক্রেন যুদ্ধ আরও দীর্ঘায়িত হওয়ার আশঙ্কা বাড়িয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র বলছে আলোচনা “উপযোগী”, আর রাশিয়া বলছে “কিছু প্রস্তাব গ্রহণযোগ্য”, কিন্তু বাস্তবে কোনো শান্তিচুক্তি হয়নি, যুদ্ধ থামারও কোনো ইঙ্গিত নেই।
এই প্রতিবেদনে যুক্তরাষ্ট্র–রাশিয়া আলোচনার ফলাফল, প্রতিক্রিয়া, রাজনৈতিক প্রভাব এবং ভবিষ্যৎ পরিস্থিতি বিস্তারিত বিশ্লেষণ করা হলো।
🔶 মার্কিন বিশেষ দূতদের মস্কো সফর: প্রত্যাশা ছিল বেশি, ফল কম
২–৩ ডিসেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ ও জারেড কুশনার মস্কোতে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে পাঁচ ঘণ্টাব্যাপী বৈঠক করেন। ট্রাম্প প্রশাসন এই আলোচনাকে “শান্তির জন্য ঐতিহাসিক সুযোগ” হিসেবে প্রচার করেছিল।
কিন্তু আলোচনার শেষে রাশিয়া জানায়—
- “কিছু মার্কিন প্রস্তাব গ্রহণযোগ্য”,
- কিন্তু বেশিরভাগ “বাস্তবতার সঙ্গে মিল নেই”,
- এবং কোনো আনুষ্ঠানিক শান্তিচুক্তি হয়নি।
কেবল এটা বলা হয়েছে যে,
“আলোচনা চালিয়ে যাওয়া হবে।”
এটা কার্যত বোঝায়—উভয় পক্ষই কাগজে–কলমে কথা বলছে, কিন্তু বাস্তবে কেউই ছাড় দিতে রাজি হয়নি।
🔶 রাশিয়ার অবস্থান: ভূখণ্ড ফেরত নয়—শর্তই নিরাপত্তা
রাশিয়ার কঠোর অবস্থান আলোচনার সবচেয়ে বড় বাধা।
পুতিন প্রশাসনের মতে—
- দনবাস, লুহানস্ক, জাপোরিঝিয়া, খেরসনের দখলকৃত অঞ্চলের প্রশ্নে রাশিয়া কোনো ছাড় দেবে না।
- তারা বলছে, এগুলো এখন “রাশিয়ার অংশ”, তাই “শান্তিচুক্তি” মানে হবে এই নতুন সীমান্তকেই বৈধতা দেওয়া।
- রাশিয়া আরও চায়—ইউক্রেন যেন ভবিষ্যতে ন্যাটোতে যোগ না দেয় এবং পশ্চিমা দেশগুলো সেখানে ভারী অস্ত্র মোতায়েন না করে।
এই দাবিগুলো ইউক্রেনসহ পশ্চিমা বিশ্বের কাছে সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য।
ফলে সমঝোতার পথ কার্যত বন্ধ।
🔶 যুক্তরাষ্ট্রের বার্তা: যুদ্ধ থামাতে চাই, কিন্তু ইউক্রেনকে বিক্রি নয়
মার্কিন দলে পাঠানো চারটি শান্তি–প্রস্তাব রাশিয়া আংশিকভাবে বিবেচনা করলেও অধিকাংশ প্রস্তাবই তারা প্রত্যাখ্যান করেছে।
মার্কিন সূত্র বলছে—
- যুক্তরাষ্ট্র চায় যুদ্ধবিরতি + সীমান্ত আলোচনা + নিরাপত্তা গ্যারান্টি,
- তবে ইউক্রেনের সার্বভৌমত্বকে ক্ষতিগ্রস্ত করে নয়।
- যুক্তরাষ্ট্রের বক্তব্য—“ইউক্রেন ছাড়া কোনো শান্তিচুক্তি টেকসই নয়।”
তবে বাস্তবতা হলো—ট্রাম্প প্রশাসন ইউক্রেন সরকারের সঙ্গে সমানভাবে আলোচনা না করে সরাসরি রাশিয়ার সঙ্গে কথা বলায় ইউরোপে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে।
🔶 ইউক্রেনের প্রতিক্রিয়া: আলোচনা চলছে, কিন্তু আমাদের ছাড়া কেন?
ইউক্রেন সরকার প্রকাশ্যে ক্ষোভ না দেখালেও তাদের অসন্তোষ স্পষ্ট।
ইউক্রেন বলছে—
- “আমাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র–রাশিয়া একা সিদ্ধান্ত নিতে পারে না।”
- “শান্তি আলোচনা অবশ্যই কিয়েভের সম্মতিতে হতে হবে।”
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জানাচ্ছেন—
“রাশিয়া যদি আলোচনার আড়ালে শুধু সময় নেয়, তবে যুদ্ধ আরও বেড়ে যেতে পারে।”
🔶 ইউরোপ ও ন্যাটোর মন্তব্য: রাশিয়া শান্তির ভান করছে
ইউরোপীয় ইউনিয়ন, জার্মানি, যুক্তরাজ্য ও ন্যাটো নেতারা বলছেন—
রাশিয়া আলোচনার নামে শুধু “কৌশলগত সময় কেনার চেষ্টা” করছে।
তারা মনে করছে—
- রাশিয়া সামরিকভাবে গত কয়েক মাসে কিছু জায়গায় অগ্রগতি পেয়েছে,
- তাই আজ সমঝোতায় আগ্রহী নয়, বরং যুদ্ধ চালিয়ে যেতে চায়।
ইউরোপ একে “Peace Trap” নামে অভিহিত করেছে।
🔶 আলোচনার পরেও যুদ্ধ—ড্রোন হামলা ও নতুন সামরিক অভিযান
আলোচনা চলার সময়ও রাশিয়া ইউক্রেনে ড্রোন হামলা, ক্ষেপণাস্ত্র আক্রমণ চালিয়েছে।
এর ফলে আন্তর্জাতিক মহল বলছে—
“যদি সত্যিই শান্তি চাইত, তাহলে অন্তত আলোচনা চলাকালীন হামলা বন্ধ করতে পারত।”
কিন্তু রাশিয়া বলছে—
“সামরিক অভিযান অপরিহার্য, কারণ মাঠের পরিস্থিতিই ভবিষ্যৎ সমঝোতার ভিত্তি।”
এটাই দেখাচ্ছে—রাশিয়া সামরিক অগ্রগতি ব্যবহার করে ভবিষ্যৎ আলোচনায় নিজেদের সুবিধা নিশ্চিত করতে চাইছে।
🔶 বিশেষজ্ঞদের মূল্যায়ন: ফলাফল ‘প্রতীকী’, বাস্তবে অগ্রগতি নেই
বিভিন্ন আন্তর্জাতিক বিশ্লেষক বলছেন—
- মস্কো বৈঠক কূটনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ হলেও
- বাস্তব ফলাফল শূন্য
- এবং প্রতিদ্বন্দ্বী উভয় দেশের অবস্থান অপরিবর্তিত।
রাশিয়া মনে করছে—
“যুদ্ধক্ষেত্রে তারা এখন সুবিধাজনক অবস্থানে”,
তাই তারা চায় তাদের শর্তেই শান্তি আসুক।
অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র বলছে—
“চাপ প্রয়োগ + আলোচনা”
—এই স্ট্র্যাটেজি বজায় রাখবে।
🔶 সামনে কী? সম্ভাব্য তিনটি পরিস্থিতি
১️⃣ আংশিক যুদ্ধবিরতি, কিন্তু পুরো শান্তি নয়
উভয় পক্ষ চাপের মুখে কিছু এলাকায় যুদ্ধ থামাতে পারে।
কিন্তু ভূখণ্ডের প্রশ্নে কোনো বড় চুক্তি হবে না।
2️⃣ যুদ্ধ আরও দীর্ঘায়িত
সমঝোতা না হলে ২০২৬ সালেও ইউক্রেন যুদ্ধ চলতে পারে।
বিশেষত রাশিয়া যদি নতুন অভিযানে সফল হয়।
৩️⃣ নতুন বড় আক্রমণ
যুদ্ধক্ষেত্রে সুবিধা নিতে রাশিয়া শীতকাল বা বসন্তে বড় আক্রমণ চালাতে পারে।
এই তিনটি সম্ভাবনার কোনোটিই শান্তির আশা দেখায় না।
🔶 সর্বশেষ
যুক্তরাষ্ট্র–রাশিয়া শান্তি–আলোচনা ব্যর্থ হয়েছে—এটা স্পষ্ট।
গঠনমূলক আলোচনা হলেও কোনো চুক্তি হয়নি, যুদ্ধও থামেনি।
রাশিয়া তাদের শর্তে অটল, যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনকে চাপ দিতে চাইছে না, আর ইউক্রেন নিজেই উদ্বিগ্ন।
ফলে এখনো যুদ্ধ বন্ধের কোনো বাস্তব সম্ভাবনা সামনে দেখা যাচ্ছে না।
বরং পরিস্থিতি আরও জটিল, আরও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে।
Related Posts
View All
রক্তে রাঙা শান্তিরক্ষা মিশন: সুদানে ড্রোন হামলায় ৬ বাংলাদেশি সেনা নিহত | Six Bangladeshi Peacekeepers Killed in Sudan Drone Attack
সুদানের দক্ষিণ কোরদোফান অঞ্চলে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনের একটি ঘাঁটিতে ভয়াবহ ড্রোন হামলায় ছয়জন বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী নিহত হয়েছেন। এই হামলাকে ‘হররিফিক’ আখ্যা দিয়ে তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। আন্তর্জাতিক মহলে শুরু হয়েছে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ ও স্বাধীন তদন্তের দাবি।

🔥 চীনের দাবি অস্বীকার, অরুণাচল প্রদেশকে ভারতের অবিচ্ছেদ্য অংশ ঘোষণা | Arunachal Will Remain Integral Part”: India’s Firm Response After Shanghai Airport Detention
শেনজেন বিমানবন্দরে অরুণাচল প্রদেশের এক ভারতীয় নাগরিক আটক হওয়ার ঘটনা ভারতের কূটনৈতিক আগ্রাসনকে তীব্রভাবে সামনে এনেছে। Ministry of External Affairs স্পষ্ট জানিয়েছে, অরুণাচল প্রদেশ ভারতের অবিচ্ছেদ্য অংশ, এবং চীনের কোনো দাবি বা অসন্তুষ্টি এ বাস্তবতা বদলায় না। ঘটনাটি শুধু ব্যক্তিগত নয়, এটি জাতীয় সার্বভৌম

⚠️ আবার যুদ্ধের আগুন! ট্রাম্প-মধ্যস্থ সমঝোতার পরও থাই–কম্বোডিয়া সংঘর্ষ বেড়েই চলছে | Border War Returns: Thai Airstrikes, Cambodian Artillery Shake Fragile Truce
থাইল্যান্ড–কম্বোডিয়া সীমান্তে ফের দফায় দফায় গোলাগুলি ও বিমান হামলায় উত্তেজনা চরমে পৌঁছেছে। ট্রাম্প-মধ্যস্থ শান্তিচুক্তির মাত্র কয়েক সপ্তাহ পরই দুই দেশের পুরনো সীমান্ত বিবাদ আবার রক্তাক্ত রূপ নিয়েছে।







