ইউক্রেন-মার্কিন গোপন চুক্তি কি সফল? জেলেনস্কির নতুন বার্তায় বিশ্ব হতবাক! | Is the War Ending? Zelensky Confirms Advancement in Peace Negotiations
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে শান্তি আলোচনায় “গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি” হয়েছে বলে জানিয়েছেন ইউক্রেন প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। মিয়ামিতে চলমান ত্রিমুখী আলোচনায় যুদ্ধবিরতি, নিরাপত্তা গ্যারান্টি ও পুনর্গঠনের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা এগোচ্ছে বলে নিশ্চিত করেছেন তিনি।

ইউক্রেন-মার্কিন গোপন চুক্তি কি সফল? জেলেনস্কির নতুন বার্তায় বিশ্ব হতবাক! | Is the War Ending? Zelensky Confirms Advancement in Peace Negotiations - Ajker Bishshow
ভলোদিমির জেলেনস্কি (Volodymyr Zelenskiy), United States (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র) ও নিজেদের প্রতিনিধিদলের মধ্যে আলোচনায় “গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি” হয়েছে বলে জানিয়েছেন। বর্তমানে ফ্লোরিডায় চলছে যুক্তরাষ্ট্র-ইউক্রেন প্রতিনিধি দলের মধ্যকার শান্তিচুক্তি সংক্রান্ত তৃতীয় দিনের আলোচনাসমূহ।
জেলেনস্কি শুক্রবার (স্থানীয় সময়) এক টেলিফোনালাপে মার্কিন প্রতিনিধিদের সঙ্গে “দীর্ঘ ও substantive (আর্থপূর্ণ)” কথোপকথন করেছেন, বলছেন আলোচনা ছিল “উৎপাদনশীল ও গঠনমূলক”।
এই ফোনালাপে মার্কিন পক্ষ থেকে ছিলেন Steve Witkoff এবং Jared Kushner। একই সঙ্গে যুক্ত ছিলেন ইউক্রেনের শীর্ষ প্রতিনিধি দলের কারিগরী ও কূটনৈতিক সদস্যরা, যারা মিয়ামিতে আলোচনায় অংশ নিচ্ছেন।
জেলেনস্কি একযোগে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কাজ করতে তারা দৃঢ়প্রত্যয়ী — এবং “যুদ্ধ বন্ধ, শান্তি, নিরাপত্তা ও পুনর্গঠন” নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র-ইউক্রেন যৌথ প্রচেষ্টায় বিশ্বাস রাখেন।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবিত শান্তি পরিকল্পনা: কোথায় দাঁড়ায় আলোচনায়?
মার্কিন প্রশাসন ইতিমধ্যেই একটি বিস্তারিত, বহু-দফার শান্তি প্রস্তাব তৈরি করেছে, যা প্রাথমিকভাবে প্রায় ২৮ দফা ছিল।
এই প্রস্তাবের মূল লক্ষ্য: যুদ্ধ বন্ধ, রাশিয়ার আগ্রাসন থামানো, ভবিষ্যতে নিরাপত্তা গ্যারান্টি দেওয়া, এবং ইউক্রেনে যুদ্ধোত্তর পুনর্গঠন ও স্থির শান্তির রূপায়ন। জেলেনস্কি, তার প্রতিনিধি দল এবং মার্কিন প্রতিনিধিরা এই প্রস্তাবের “সংবেদনশীল দিক” নিয়ে আলোচনা করার জন্য প্রস্তুত — তবে এই আলোচনায় ইউক্রেনের স্বার্থ ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা অপরিহার্য।
ইতোমধ্যে, মিয়ামিতে চলমান আলোচনায় কিছু “মূল দিক” পরিষ্কার করতে ব্যবসাযোগ্য আলোচনা হয়েছে — যার মধ্যে রয়েছে কীভাবে রাশিয়া গ্যারান্টি দেবে যে যুদ্ধবিরতি মেনে চলবে; এবং ঝুঁকি ও বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া কেমন হবে।
তবে একটি বড় চ্যালেঞ্জ এখনও রয়েছে: রাশিয়া এখনো উল্লেখযোগ্যভাবে আপস করেনি। মস্কো-র দখলকৃত ভূখণ্ড এবং ভবিষ্যতে তার দৃষ্টিভঙ্গী নিয়ে স্পষ্টতা না থাকলে, প্রস্তাবিত শান্তি পরিকল্পনা কতটা বাস্তবিক হবে, সেটি অনিশ্চিত।
যুদ্ধ ও ভৌগলিক বাস্তবতা: শান্তিচুক্তি কি আগুনে তেলে ঝরছে?
এই আলোচনার পাশাপাশি, যুদ্ধক্ষেত্রে অবস্থা কোনভাবেই স্থির নয়। রাশিয়া–ইউক্রেন সংঘর্ষ এখনো তেজ রেখে চলছে। বিশেষত, রাশিয়া সাম্প্রতিক সময়ে বড় স্কেলে ড্রোন ও মিসাইল হামলা চালাচ্ছে, যা শহর, বেসামরিক অবকাঠামো, বিদ্যুৎ ও রেল যোগাযোগীয় নেটওয়ার্ককে লক্ষ্য করছে।
ইউক্রেনের রাজধানী ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলোর নিরাপত্তা হুমকির মুখে রয়েছে। এমন অবস্থায়, যেকোনো শান্তিচুক্তি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে গ্যারান্টি দেয়া এবং তা নিশ্চিত করার প্রক্রিয়া তৈরি করা — এখন আগের চেয়ে বেশি জরুরি। জেলেনস্কি–মার্কিন আলোচনা হয়তো অগ্রগতি দেখাচ্ছে, কিন্তু যুদ্ধ থামানো এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে কি, সেটা পুরোপুরি নিশ্চিত নয়।
ইউরোপিয় অংশগ্রহণ ও আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপট: একটি বড় ঘরানা গড়ার প্রয়োজনীয়তা
শুধু যুক্তরাষ্ট্র-ই নয়, ইউক্রেন এবং তার মিত্র দেশগুলোর জন্য শান্তি চুক্তি পরিমাপ করার ক্ষেত্রে ইউরোপীয় শক্তি ও গ্যারান্টি গুরুত্বপূর্ণ। ইতিমধ্যেই ইউক্রেনীয় প্রতিনিধি দল নির্দেশ দিয়েছে, ভবিষ্যতে এমন একটি নিরাপত্তা গঠন (peacekeeping / reassurance force) যা শুধু যুদ্ধবিরতি নয় — যুদ্ধোত্তর পুনর্গঠন ও দীর্ঘস্থায়ী নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে।
এই প্রস্তাবিত ইউরোপীয় অংশগ্রহণ কেবল সামরিক নয় — অর্থনৈতিক ও পুনর্গঠনমূলক দিক থেকেও গুরুত্বপূর্ণ। যুদ্ধে ধ্বংসপ্রাপ্ত অবকাঠামো, বাসস্থান, বিদ্যুৎ, পানি–গ্যাস, এবং নাগরিক নিরাপত্তার পুনর্গঠন হলে, ইউক্রেনে স্থায়ী শান্তি ও সামাজিক পুনর্মিলন সম্ভব।
ইতিমধ্যেই, ইউরোপীয় নেতারা যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেনের সাথে একীভূত উদ্যোগ নেওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন। তবে সবকিছুর মূল শর্ত — রাশিয়ার অংশগ্রহণ ও প্রতিশ্রুতি। যদি রাশিয়া মেনে নেয় এবং বাস্তবিকভাবে যুদ্ধবিরতি বজায় রাখে, তাহলে এই মডেল বাস্তবায়ন সম্ভব। অন্যথায়, শান্তিপ্রক্রিয়া আবার ধাক্কায় পড়তে পারে।
কেন যৌথ প্রচেষ্টা জরুরি: ইউক্রেনের ভবিষ্যৎ, রাশিয়ার প্রতিশ্রুতি ও গ্যারান্টি
১. রাশিয়ার বিশ্বাসযোগ্যতা: ইতিহাস ও সম্প্রতিক সংঘর্ষ দেখিয়েছে, রাশিয়া কোন প্রতিশ্রুতিই কূটনৈতিকভাবে ধরা দিচ্ছে না। অতীত শান্তিচুক্তিও লঙ্ঘনের নজির রয়েছে। তাই, শুধু কাগজে নয় — এমন বাস্তব গ্যারান্টি প্রয়োজন যা নিশ্চিত করবে যে রাশিয়া আকস্মিকভাবে আগ্রাসন শুরু করবে না।
২. জরুরি নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনা: যদি যুদ্ধ বন্ধ হয়, ইউক্রেনের নাগরিকরা ফিরবে, অবকাঠামো ও বাসস্থান পুনুর্নির্মাণ হবে; কিন্তু সেটা সম্ভব হবে কেবলমাত্র যদি নিরাপত্তা গ্যারান্টির ব্যবস্থা থাকে।
৩. আন্তর্জাতিক সমন্বয় ও অর্থায়ন: ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্র মিলে একটি বড় পুনর্গঠন প্যাকেজ এবং নিরাপত্তা গ্যারান্টি পরিকল্পনা চালু করলে, ইউক্রেন শুধু অস্ত্র নয় বরং ভবিষ্যতের জন্য একটি স্থিতিশীল রাষ্ট্র হিসেবে গড়া সম্ভব।
৪. রাশিয়ার বিরুদ্ধে রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক প্রভাব: এমন শান্তিচুক্তি যেখানে রাশিয়ার অংশগ্রহণ ও গ্যারান্টি বাধ্যতামূলক — তা শুধু অস্ত্রবিরতি নয়, যুদ্ধের রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক ফলাফলকেও রূপ দিতে পারে।
চ্যালেঞ্জ ও ঝুঁকি: শান্তি কি নিরাপদ?
- যদিও আলোচনায় অগ্রগতি হয়েছে, বর্তমানে যুদ্ধ চলছে। রাশিয়া যদি ভূ–রাজনৈতিক দাবিতেই চাপ দেয়, তাহলে শান্তিচুক্তি জরুরি হলেও ঝুঁকিপূর্ণ।
- রাশিয়া থেকে গ্যারান্টি পেলে কি তা মানবে? অতীতে প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ হয়েছে — তাই পুনরায় বিশ্বাস প্রতিষ্ঠা করা কঠিন হবে।
- শান্তি চুক্তি গ্রহণ করে ইউক্রেনীয় জনগণ ও রাজনীতি কি সেটি মেনে নিবে? বিশেষ করে যারা ক্ষতিগ্রস্ত, তারা কখনোই “আপোস নয়, প্রকৃত গ্যারান্টি” চান।
- অর্থায়ন ও পুনর্গঠন: যুদ্ধোত্তর পুনরুদ্ধার ও বসতি ফিরিয়ে আনার জন্য বড় বাজেট ও আন্তর্জাতিক সমন্বয় দরকার। সবকিছু না মিললে, শান্তি শুধু দলিলেই থেকে যাবে।
এ মুহূর্তে, জেলেনস্কি এবং তার সরকার জানিয়ে দিচ্ছেন যে তারা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কাজ চালিয়ে যেতে চান। “গঠনমূলক ও গুরুত্বপুর্ণ” আলোচনার পর, দ্বিপাক্ষিক আলোচনা একটি নতুন দিশা পেয়েছে। যদি রাশিয়া নিরাপত্তা গ্যারান্টি, যুদ্ধবিরতি এবং সম্ভাব্য পক্ষ সমন্বয়ে সত্যি অংশ নেয় — তাহলে ইউক্রেনে ২০২৫ বা ২০২৬ সালের মধ্যে একটি সম্ভাব্য শান্তি পথ খুলে যেতে পারে।
তবে এই শান্তিপথটি খুবই নাজুক — এবং সফল করতে হলে শুধু কথাবার্তার চেয়েও অনেক বেশি দরকার: বাস্তব প্রতিশ্রুতি, কঠিন নিরাপত্তা ব্যাবস্থা, আন্তর্জাতিক অংশগ্রহণ, আর যুদ্ধোত্তর পুনর্গঠন।
Related Posts
View All
রক্তে রাঙা শান্তিরক্ষা মিশন: সুদানে ড্রোন হামলায় ৬ বাংলাদেশি সেনা নিহত | Six Bangladeshi Peacekeepers Killed in Sudan Drone Attack
সুদানের দক্ষিণ কোরদোফান অঞ্চলে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনের একটি ঘাঁটিতে ভয়াবহ ড্রোন হামলায় ছয়জন বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী নিহত হয়েছেন। এই হামলাকে ‘হররিফিক’ আখ্যা দিয়ে তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। আন্তর্জাতিক মহলে শুরু হয়েছে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ ও স্বাধীন তদন্তের দাবি।

🔥 চীনের দাবি অস্বীকার, অরুণাচল প্রদেশকে ভারতের অবিচ্ছেদ্য অংশ ঘোষণা | Arunachal Will Remain Integral Part”: India’s Firm Response After Shanghai Airport Detention
শেনজেন বিমানবন্দরে অরুণাচল প্রদেশের এক ভারতীয় নাগরিক আটক হওয়ার ঘটনা ভারতের কূটনৈতিক আগ্রাসনকে তীব্রভাবে সামনে এনেছে। Ministry of External Affairs স্পষ্ট জানিয়েছে, অরুণাচল প্রদেশ ভারতের অবিচ্ছেদ্য অংশ, এবং চীনের কোনো দাবি বা অসন্তুষ্টি এ বাস্তবতা বদলায় না। ঘটনাটি শুধু ব্যক্তিগত নয়, এটি জাতীয় সার্বভৌম

⚠️ আবার যুদ্ধের আগুন! ট্রাম্প-মধ্যস্থ সমঝোতার পরও থাই–কম্বোডিয়া সংঘর্ষ বেড়েই চলছে | Border War Returns: Thai Airstrikes, Cambodian Artillery Shake Fragile Truce
থাইল্যান্ড–কম্বোডিয়া সীমান্তে ফের দফায় দফায় গোলাগুলি ও বিমান হামলায় উত্তেজনা চরমে পৌঁছেছে। ট্রাম্প-মধ্যস্থ শান্তিচুক্তির মাত্র কয়েক সপ্তাহ পরই দুই দেশের পুরনো সীমান্ত বিবাদ আবার রক্তাক্ত রূপ নিয়েছে।







