হানুক্কা উদযাপন থেকে মৃত্যুপুরী: কীভাবে বন্ডি বিচে নেমে এলো ভয়াবহ তাণ্ডব | Bondi Beach Massacre: Police Say Father and Son Planned Jewish Event Shooting
অস্ট্রেলিয়ার সিডনির বন্ডি বিচে হানুক্কা উৎসব চলাকালে সংঘটিত ভয়াবহ বন্দুক হামলায় কমপক্ষে ১৫ জন নিহত হয়েছেন। পুলিশ জানিয়েছে, পরিকল্পিত এই হামলার পেছনে ছিল এক পিতা ও তার ছেলে। ইহুদি ধর্মীয় সমাবেশকে লক্ষ্য করে চালানো এই হামলা অস্ট্রেলিয়া ও বিশ্বজুড়ে গভীর উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।

হানুক্কা উদযাপন থেকে মৃত্যুপুরী: কীভাবে বন্ডি বিচে নেমে এলো ভয়াবহ তাণ্ডব | Bondi Beach Massacre: Police Say Father and Son Planned Jewish Event Shooting - Ajker Bishshow
২০২৫ সালের ডিসেম্বর ১৪ সন্ধ্যায় অস্ট্রেলিয়ার সিডনির বিখ্যাত বন্ডি বিচে একটি জনসমাগমে ভয়াবহ বন্দুকধারী হামলা ঘটে। হামলাটি তখনই সংঘটিত হয় যখন হানুক্কা উৎসব নামে একটি ইহুদি ধর্মীয় উদযাপন “Chanukah by the Sea” অনুষ্ঠানের অংশ হিসেবে সেখানে শত শত লোক জমায়েত হয়েছিল।
প্রাথমিক জরুরি পরিস্থিতি ঘোষণা করা হয় যখন দুই বন্দুকধারী জনসমাগমে নির্বিচারে গোলি চালাতে শুরু করে। পুলিশের প্রতিক্রিয়ায় একজন হামলাকারী নিহত হয়, আর অন্যজনকে আহত অবস্থায় গ্রেপ্তার করা হয় এবং হাসপাতালে নেওয়া হয়। বাড়তি তদন্তে জানা গেছে হামলাকারীরা ছিলেন একজন পিতা ও তাঁর ২৪ বছর বয়সী পুত্র, যারা পরিকল্পিতভাবে এই হামলা চালিয়েছিল।
এমতাবস্থায় এটি অস্ট্রেলিয়ার সাম্প্রতিক ইতিহাসে সবচেয়ে প্রাণঘাতী হত্যা ঘটনাগুলির একটি এবং একটি প্রদর্শিত বার্তা হিসেবে ঘৃণা ও ভয়ের সংকেত হয়ে দাঁড়িয়েছে বিশ্বমঞ্চে।
হামলার সময় ও স্থান
এই ভয়াবহ ঘটনা ঘটে সিডনি শহরের বন্ডি বিচের আর্চার পার্কের কাছে, যেখানে সন্ধ্যা অপেক্ষাকৃত নরম হালকা ছিল। স্থানীয় সময় ১৮:৪৭ (AEDT) নাগাদ অনুষ্ঠান চলাকালীনই বন্দুকধারীরা একটি মধ্যবিত্ত জনসমাগমে লক্ষ্য করে গান চালাতে শুরু করে।
অনুষ্ঠানে প্রায় ১,০০০ জন লোক উপস্থিত ছিলেন, যার মধ্যে পরিবারের ঊর্দ্ধে-নিচে সদস্য, বৃদ্ধ-শিশু, এমনকি স্থানীয় গির্জা ও সম্প্রদায়ের নেতারা অন্তর্ভুক্ত ছিলেন।
তারা “Chanukah by the Sea” নামে পরিচিত এই উৎসবটি চাবাড ইহুদি সম্প্রদায়ের আয়োজন হিসাবে উদযাপন করছিল, যেখানে সার্বজনীন শ্রী ও বন্ধুত্বের পরিবেশ ছিল।
বন্দুকধারীদের পরিচিতি
পুলিশ ও তদন্তকারী সংস্থাগুলো দ্রুত নিশ্চিত করেছে যে হামলাকারীরা পিতা ও পুত্র — বয়স আনুমানিক ৫০ বছর ও ২৪ বছর — এবং তারা ইচ্ছাকৃতভাবে লক্ষ্যবস্তুতে গুলি চালিয়েছে।
একই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৫০ বছর বয়সী পিতা ঘটনাস্থলেই নিহত হয়েছেন, আর তাঁর ২৪ বছর বয়সী পুত্র গুরুতর আহত অবস্থায় হসপিটালে চিকিৎসাধীন।
স্থানীয় সূত্র জানায়, ইতোমধ্যেই এক জনকে ASIO (অস্ট্রেলিয়ার নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থা) পূর্বেই চিহ্নিত করেছিল, যদিও তাঁকে “অবিলম্বে হুমকি” হিসেবে দেখা হয়নি।
পুলিশের অনুসন্ধানে হামলাকারীদের পারিবারিক ঠিকানায় অভিযান চালানো হয়েছে এবং কিছু আইইডি-জাতীয় সন্দেহভাজন বস্তুর সন্ধান পাওয়া গেছে, যা আরও তদন্তের বিষয়।
ঘাতক হামলার ধরণ ও শিকার
এই উগ্র হামলাটি এমন একটি সময় ঘটেছে যখন সাধারণ মানুষ শান্তিপূর্ণভাবে ধর্মীয় উৎসব পালন করছিল। হামলাকারীরা উচ্চ স্থানে দাঁড়িয়ে জনসাধারণের দিকে দীর্ঘ-নালযুক্ত বন্দুক দিয়ে নির্বিচারে গুলি চালায়, ফলে বহু লোক তড়িঘড়ি করে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজ করে।
eyewitnessদের বর্ণনায়, মাত্র কয়েক মিনিটের মধ্যে লক্ষাধিক গুলি চালানো হয়েছিল। কিছু লোক বলেছে এটি যেন “লক্ষ্যবিহীন লক্ষ্যাভিযান” ছিল, যেখানে বন্দুকধারীরা প্রাণশুদ্ধিতে গুলি চালাচ্ছিল।
পুলিশ এলাকা তৎক্ষণাত ঘিরে ফেলে এবং হাতে অস্ত্রধারী সন্দেহভাজন বন্দুকধারীদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায়। এক হামলাকারী নিহত হলেও অপরজন আহত অবস্থায় গ্রেপ্তার হয় এবং হাসপাতালে নেওয়া হয়।
নিউ সাউথ ওয়েলস পুলিশ কমিশনার বলেছেন যে হামলায় নিহত ৫০ বছর বয়সী বন্দুকধারী বিনোদনমূলক শিকারের জন্য আগ্নেয়াস্ত্র লাইসেন্সের যোগ্যতা অর্জন করেছিলেন।
"তিনি একটি বন্দুক ক্লাবের সদস্য ছিলেন এবং আগ্নেয়াস্ত্র আইনের প্রকৃতি অনুসারে আগ্নেয়াস্ত্র লাইসেন্স পাওয়ার অধিকারী ছিলেন," মাল ল্যানিয়ন বলেন। তিনি বলেন যে লোকটির একটি "ক্যাটাগরি AB লাইসেন্স ছিল, যা তাকে তার লম্বা অস্ত্র রাখার অধিকার দেয়।"
ভয়াবহ প্রাণহানি ও আহত
এই হামলায় নিম্নতম ১৫ জন নিহত হয়েছে — শিশুসহ — এবং আরও ৪০ জনেরও বেশি মানুষ আহত হয়েছে। আহতদের মধ্যে ছিল পুলিশ অফিসার এবং সাধারণ উভয়ই।
নিহতদের মধ্যে রয়েছে ইহুদি সম্প্রদায়ের সদস্য, বিদেশি নাগরিক ও স্থানীয় বাসিন্দারা। রব্বি এলি শ্লানগার নামে এক ধর্মীয় নেতার মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করা হয়েছে।
অস্কার-প্রাপ্ত বার্তাবাহক এবং বন্ধুদের স্মরণে একাধিক উৎসব-সহযোগী এই হত্যাকান্ডে নিহতদের পরিবার ও সমর্থকরা গভীর শোক ও বিচলতায় আছেন।
অনেকেই বীরত্ব প্রদর্শন করেছে
এই ভয়াবহ পরিস্থিতিতে কিছু লোক স্বপ্রতিক্রিয়ায় বীরত্ব দেখিয়েছেন। একটি ভিডিও তে দেখা গেছে এক নাগরিক বন্দুকধারীদের মধ্যে থেকে একটি বন্দুক ছিনিয়ে নেয়, যা অনেকের প্রাণ রক্ষা করেছে।
এই বীর ব্যক্তি, পরিচয়ে ৪৩ বছর বয়সী আহমেদ আল আহমেদ, হামলার সময় একটি দোকান মালিক ছিলেন এবং পরিবারসহ উপস্থিত ছিলেন। তাঁর সাহসিকতার জন্য স্থানীয় ও জাতীয় গন্যমান্য ব্যক্তিরা তাকে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন।
সরকার ও আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবেনিজে এই হামলাকে “নিজেদের নাগরিকদের প্রতি অশুভ ও নিন্দনীয় অ্যাক্ট অফ হেট” হিসেবে বর্ণনা করেছেন এবং ক্ষতিগ্রস্তদের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন।
তিনি অনুরোধ করেন যে অস্ট্রেলিয়ার সব নাগরিকদের নিরাপত্তা ও আস্থা নিশ্চিত করতে সরকার কঠোর ব্যবস্থা নেবে এবং তদন্ত দ্রুত শেষ হবে।
ইউরোপের, আমেরিকার ও মধ্যপ্রাচ্যের রাষ্ট্রনেতারা হামলাটি কঠোরভাবে নিন্দা জানিয়েছেন এবং ইহুদি সম্প্রদায়ের প্রতি সহমর্মিতা প্রকাশ করেছেন।
সাম্প্রদায়িক ও সামাজিক প্রভাব
এই হত্যাকাণ্ড অস্ট্রেলিয়ায় সাম্প্রদায়িক উত্তেজনার নতুন মাত্রা আনতে পারে। দেশটির ইহুদি সম্প্রদায়ের নেতারা নিরাপত্তা সংক্রান্ত উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন এবং বলেছেন যে সম্প্রদায়ের অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়া আরও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে।
স্থানীয়রা বলছেন, একসময় যেখানে বন্ডি বিচ উদযাপন, শান্তি ও ভ্রমণের প্রতীক ছিল, এখন তা ভয় ও নিরাপত্তা সংক্রান্ত জটিলতার প্রতীকেও পরিণত হয়েছে।
পুলিশের তদন্ত ও আগামী পদক্ষেপ
নিউজ শাখাগুলোর তথ্য অনুযায়ী, পুলিশের তদন্ত এখনো চলছে, এবং তারা হামলাকারীদের পেছনের উদ্দেশ্য ও প্ল্যান সম্পর্কে আরও অনুসন্ধান করছে। কিছু সন্দেহভাজন আইইডি-জাতীয় বস্তুর সন্ধান পাওয়া গেছে, যা বিস্ফোরক প্রমাণের জন্য আরও বিশ্লেষণ করা হচ্ছে।
পুলিশ পাশাপাশি দেখছে যে কেউ আর সহায়তা করেছিল কি না, এবং হামলার পেছনের দূরবর্তী নেটওয়ার্ক আছে কি না। এয়ারপোর্ট, ধর্মীয় স্থান ও জনসমাগম স্থলে নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে যাতে এরকম রহস্যময় হামলা পুনরায় না ঘটে।
বন্ডি বিচে ঘটে যাওয়া এই গণহত্যা অস্ট্রেলিয়ায় হিংসা, অস্থিরতা ও সামাজিক নিরাপত্তার প্রতি গভীর সতর্কবার্তা দিয়েছে। সত্য যে সন্দেহভাজন পিতা ও পুত্র বন্দুকধারীদের করেছেন অপরাধ, এই দুঃখজনক ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার, বন্ধুবান্ধব ও সমাজ আজও শোকগাম্ভীর্যে নিমজ্জিত। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়সহ অস্ট্রেলিয়ার জনগণ এই ঘটনায় একত্রিত হয়ে ঘৃণা, সহমর্মিতা ও মানবিক মূল্যবোধকে জোরদার করার আহ্বান জানাচ্ছে।
Related Posts
View All
বন্ডি বিচে ভয়াবহ গুলিবর্ষণ: ‘আইএস মতাদর্শে অনুপ্রাণিত’ হামলা, বললেন অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী | Bondi Beach Mass Shooting: Australian PM Says Attack Linked to Islamic State Ideology
অস্ট্রেলিয়ার বন্ডি বিচে ধর্মীয় উৎসব চলাকালীন ভয়াবহ গুলিবর্ষণে অন্তত ১৫ জন নিহত ও ৪০ জনের বেশি আহত হয়েছেন। অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন, এই হামলার পেছনে ইসলামিক স্টেটের চরমপন্থী মতাদর্শের প্রভাব থাকতে পারে।

রক্তে রাঙা শান্তিরক্ষা মিশন: সুদানে ড্রোন হামলায় ৬ বাংলাদেশি সেনা নিহত | Six Bangladeshi Peacekeepers Killed in Sudan Drone Attack
সুদানের দক্ষিণ কোরদোফান অঞ্চলে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনের একটি ঘাঁটিতে ভয়াবহ ড্রোন হামলায় ছয়জন বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী নিহত হয়েছেন। এই হামলাকে ‘হররিফিক’ আখ্যা দিয়ে তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। আন্তর্জাতিক মহলে শুরু হয়েছে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ ও স্বাধীন তদন্তের দাবি।






