বন্ডি বিচে ভয়াবহ গুলিবর্ষণ: ‘আইএস মতাদর্শে অনুপ্রাণিত’ হামলা, বললেন অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী | Bondi Beach Mass Shooting: Australian PM Says Attack Linked to Islamic State Ideology
অস্ট্রেলিয়ার বন্ডি বিচে ধর্মীয় উৎসব চলাকালীন ভয়াবহ গুলিবর্ষণে অন্তত ১৫ জন নিহত ও ৪০ জনের বেশি আহত হয়েছেন। অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন, এই হামলার পেছনে ইসলামিক স্টেটের চরমপন্থী মতাদর্শের প্রভাব থাকতে পারে।

বন্ডি বিচে ভয়াবহ গুলিবর্ষণ: ‘আইএস মতাদর্শে অনুপ্রাণিত’ হামলা, বললেন অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী | Bondi Beach Mass Shooting: Australian PM Says Attack Linked to Islamic State Ideology - Ajker Bishshow
অস্ট্রেলিয়ার সিডনির জনপ্রিয় পর্যটন এলাকা বন্ডি বিচে ঘটে গেছে এক ভয়াবহ ও হৃদয়বিদারক ঘটনা। একটি ধর্মীয় উৎসব চলাকালীন সেখানে এলোপাতাড়ি গুলিবর্ষণে অন্তত ১৫ জন নিহত হয়েছেন এবং ৪০ জনের বেশি মানুষ আহত হয়েছেন। আহতদের অনেকেই এখনো হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
এই হামলার পর অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবেনিজ়ে বলেছেন, প্রাথমিক তদন্তে স্পষ্ট ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে যে হামলাকারীরা ‘ইসলামিক স্টেট (আইএস)’–এর চরমপন্থী মতাদর্শে অনুপ্রাণিত ছিল।
এই ঘটনা অস্ট্রেলিয়া জুড়ে গভীর শোক, আতঙ্ক ও ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে।
কখন ও কোথায় এই হামলা ঘটে
ঘটনাটি ঘটে ১৪ ডিসেম্বর সন্ধ্যায়, যখন বন্ডি বিচের কাছে একটি খোলা জায়গায় হানুক্কাহ উৎসব উদযাপন করছিল ইহুদি সম্প্রদায়ের মানুষ। উৎসবটির নাম ছিল “Chanukah by the Sea”।
সন্ধ্যার দিকে সেখানে শিশু, নারী, বয়স্ক মানুষসহ শত শত মানুষ উপস্থিত ছিলেন। সবাই আনন্দ করছিলেন, গান বাজছিল, আলো জ্বলছিল—ঠিক তখনই আচমকা গুলির শব্দে পুরো এলাকা কেঁপে ওঠে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই উৎসবের জায়গাটি রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। মানুষ দিকবিদিক ছুটতে শুরু করে, অনেকেই মাটিতে লুটিয়ে পড়েন।
হতাহতের ভয়াবহ চিত্র
পুলিশ ও স্বাস্থ্য বিভাগ জানিয়েছে—
- নিহত: কমপক্ষে ১৫ জন
- আহত: ৪০ জনের বেশি
- আহতদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা গুরুতর
- নিহতদের মধ্যে নারী, শিশু ও বয়স্ক ব্যক্তিও রয়েছেন
এই ঘটনা সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অস্ট্রেলিয়ায় ঘটে যাওয়া সবচেয়ে ভয়াবহ গণহত্যার একটি বলে মনে করা হচ্ছে।
কারা এই হামলা চালিয়েছে
পুলিশ জানিয়েছে, হামলার সঙ্গে জড়িত ছিল বাবা ও ছেলে—দুজনই অস্ট্রেলিয়ার নাগরিক।
- বাবা: সাজিদ আকরাম (৫০ বছর)
- ছেলে: নাভিদ আকরাম (২৪ বছর)
ঘটনার সময় পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে বাবা সাজিদ আকরাম নিহত হন। তার ছেলে নাভিদ আকরাম গুলিবিদ্ধ অবস্থায় ধরা পড়ে এবং বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
পুলিশ জানিয়েছে, এই দুইজন একসঙ্গে পরিকল্পনা করেই হামলাটি চালায়।
বৈধ অস্ত্রই ব্যবহৃত হয়েছে হামলায়
এই ঘটনায় সবচেয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য হলো—
হামলাকারী বাবা সাজিদ আকরামের কাছে আইনিভাবে লাইসেন্সকৃত একাধিক আগ্নেয়াস্ত্র ছিল।
অর্থাৎ, তিনি অবৈধভাবে নয়, বরং সরকারি অনুমোদন নিয়েই অস্ত্রগুলো রেখেছিলেন। এই বিষয়টি অস্ট্রেলিয়ার অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাকে নতুন করে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে।
অনেকেই এখন জানতে চাইছেন—
যদি কেউ চরমপন্থী চিন্তার সঙ্গে যুক্ত থাকে, তাহলে তার হাতে কীভাবে এত অস্ত্র থাকতে পারে?
কেন বলা হচ্ছে ‘আইএস মতাদর্শে অনুপ্রাণিত’
অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী ও তদন্তকারী সংস্থাগুলো কয়েকটি কারণে এই হামলাকে আইএস মতাদর্শ-অনুপ্রাণিত বলছে—
- হামলাকারীদের গাড়ি ও বাড়ি থেকে আইএস–এর পতাকা ও চিহ্ন পাওয়া গেছে
- তাদের মোবাইল ও অনলাইন কার্যকলাপে চরমপন্থী ভিডিও ও বক্তব্যের প্রমাণ মিলেছে
- তারা আগেও উগ্রবাদী কনটেন্ট দেখত ও শেয়ার করত
প্রধানমন্ত্রী বলেন,
“এটি কোনো সাধারণ অপরাধ নয়। এটি ঘৃণা ও চরমপন্থী চিন্তা থেকে জন্ম নেওয়া একটি সন্ত্রাসী হামলা।”
তবে তিনি এটাও বলেন, এখন পর্যন্ত কোনো বড় আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী নেটওয়ার্কের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগের প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
আগে থেকেই নজরে ছিল কি না হামলাকারীরা
এই ঘটনায় আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উঠেছে—
হামলাকারীরা কি আগে থেকেই গোয়েন্দা সংস্থার নজরে ছিল?
পুলিশ ও নিরাপত্তা সংস্থার তথ্য অনুযায়ী—
- নাভিদ আকরাম কয়েক বছর আগে একবার নিরাপত্তা সংস্থার নজরে এসেছিল
- তবে তখন তাকে ‘তাৎক্ষণিক হুমকি’ হিসেবে ধরা হয়নি
- তার বিরুদ্ধে কোনো বড় অপরাধের রেকর্ডও ছিল না
এখন প্রশ্ন উঠছে—
তাহলে কি তাকে আরও কড়া নজরে রাখা উচিত ছিল?
এই বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চলছে।
ইহুদি সম্প্রদায়ের ওপর হামলা?
হানুক্কাহ একটি গুরুত্বপূর্ণ ইহুদি ধর্মীয় উৎসব।
এই উৎসব চলাকালীন হামলা হওয়ায় অনেকেই বলছেন—
এটি শুধুই সন্ত্রাস নয়,
বরং ইহুদি সম্প্রদায়কে লক্ষ্য করে করা একটি ঘৃণামূলক হামলা।
অস্ট্রেলিয়ার ইহুদি নেতারা এটিকে সরাসরি অ্যান্টিসেমিটিক (ইহুদিবিদ্বেষী) আক্রমণ বলে উল্লেখ করেছেন।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকেও এই হামলার তীব্র নিন্দা জানানো হয়েছে।
মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রতিক্রিয়া
অস্ট্রেলিয়ার মুসলিম নেতারাও এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন।
তারা স্পষ্টভাবে বলেছেন—
“এই হামলার সঙ্গে ইসলামের কোনো সম্পর্ক নেই।
নিরীহ মানুষ হত্যা ইসলামের শিক্ষা নয়।”
অনেক মসজিদ ও মুসলিম সংগঠন নিহতদের জন্য শোক ও প্রার্থনার আয়োজন করেছে।
সরকারের পদক্ষেপ ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
এই ঘটনার পর অস্ট্রেলিয়ার সরকার বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেওয়ার কথা জানিয়েছে—
- অস্ত্র লাইসেন্স ব্যবস্থা নতুন করে পর্যালোচনা
- চরমপন্থী মতাদর্শ দমনে কঠোর নজরদারি
- ধর্মীয় ও সংখ্যালঘু অনুষ্ঠানে নিরাপত্তা বাড়ানো
- অনলাইন উগ্রবাদী কনটেন্টের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা
প্রধানমন্ত্রী বলেছেন,
“আমরা এমন একটি দেশ হতে পারি না, যেখানে ঘৃণার রাজনীতি মানুষ হত্যা করে।”
দেশজুড়ে শোক ও নীরবতা
হামলার পর বন্ডি বিচসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে—
- ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা
- মোমবাতি প্রজ্বালন
- নীরবতা পালন
মানুষ একে অন্যকে জড়িয়ে ধরছে, কাঁদছে, প্রশ্ন করছে—
এত নিরাপদ একটি দেশে কীভাবে এমন ঘটনা ঘটল?
বন্ডি বিচের এই হামলা অস্ট্রেলিয়ার ইতিহাসে একটি কালো অধ্যায় হয়ে থাকবে।
এটি শুধু একটি গুলিবর্ষণের ঘটনা নয়—
এটি ঘৃণা, উগ্রবাদ ও ভুল মতাদর্শের ভয়ংকর পরিণতির উদাহরণ। অনেকেই একে ফিলিস্তিনিদের উপর করা ইসরায়েলের বর্বরতার ফলস্বরূপ দেখছেন।
এই ঘটনা আবারও মনে করিয়ে দেয়—
চরমপন্থা কোনো ধর্মের নয়,
এটি মানুষের বিরুদ্ধে মানুষের যুদ্ধ।
Related Posts
View All
হানুক্কা উদযাপন থেকে মৃত্যুপুরী: কীভাবে বন্ডি বিচে নেমে এলো ভয়াবহ তাণ্ডব | Bondi Beach Massacre: Police Say Father and Son Planned Jewish Event Shooting
অস্ট্রেলিয়ার সিডনির বন্ডি বিচে হানুক্কা উৎসব চলাকালে সংঘটিত ভয়াবহ বন্দুক হামলায় কমপক্ষে ১৫ জন নিহত হয়েছেন। পুলিশ জানিয়েছে, পরিকল্পিত এই হামলার পেছনে ছিল এক পিতা ও তার ছেলে। ইহুদি ধর্মীয় সমাবেশকে লক্ষ্য করে চালানো এই হামলা অস্ট্রেলিয়া ও বিশ্বজুড়ে গভীর উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।

রক্তে রাঙা শান্তিরক্ষা মিশন: সুদানে ড্রোন হামলায় ৬ বাংলাদেশি সেনা নিহত | Six Bangladeshi Peacekeepers Killed in Sudan Drone Attack
সুদানের দক্ষিণ কোরদোফান অঞ্চলে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনের একটি ঘাঁটিতে ভয়াবহ ড্রোন হামলায় ছয়জন বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী নিহত হয়েছেন। এই হামলাকে ‘হররিফিক’ আখ্যা দিয়ে তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। আন্তর্জাতিক মহলে শুরু হয়েছে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ ও স্বাধীন তদন্তের দাবি।





